খাবার হিসেবে কাঠবাদামের জনপ্রিয়তা দিনদিন বেড়েই চলেছে। অবশ্য এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব আলাবামার ডিপার্টমেন্ট অব হিউম্যান নিউট্রিশন অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ক্রিস্টি ক্রো-হোয়াইট বলেন, ‘কাঠবাদাম হলো একটি ফ্যান্টাসটিক সুপার ফুড, যেখানে দশটিরও বেশি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস ও মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে। এসব পুষ্টি হার্ট ও রক্তনালীর স্বাস্থ্যকে উন্নত করে।’
সম্মানিত ভিউয়ার, কাফ মাল্টিমিডিয়া ইউটিউব চ্যানেলের আরও একটি নতুন ভিডিওতে আপনাকে স্বাগতম। কাঠবাদামের উপকারিতা নিয়েই আমরা আজকের ভিডিওতে আলোচনা করবো। তাহলে আর দেরি না করে চলুন জেনে নেই কাঠবাদামের উপকারিতা সম্পর্কে।
এক) কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়:
শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় বাদাম। প্রতিদিনের ডায়েটে বাদাম অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। আসলে বাদামে উপস্থিত বেশ কিছু কার্যকরী উপাদান শরীরে ভিতরে ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণ মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, থাকে ওমেগা-সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিডও। কিন্তু কোনোরকম ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা কম থাকে।
দুই) হাড়েঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়:
গবেষণায় দেখা গেছে, বাদামে উপস্থিত ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর এমন কিছু কাজ করে যার প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই প্রতিদিন বাদাম খাওয়া শুরু করলে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকবে।
তিন) মস্তিস্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
আমেরিকার অ্যান্ড্রস ইউনিভার্সিটির গবেষকদের করা এক পরীক্ষায় দেখা গেছে বাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই পরীক্ষার আগে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ম করে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
চার) পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়:
বাদামে রয়েছে প্রায় তিন দশমিক পাঁচ গ্রাম ফাইবার, ছয় গ্রাম প্রোটিন, চৌদ্দ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন-ই, ম্যাঙ্গানিজ, ভিটামিন বি-2, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবগুলো উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ প্রয়োজনে লাগে।
পাঁচ) ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখে:
পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলেন, বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই মৌল। তাই ম্যাগনেশিয়ামের পরিমাণ সঠিক থাকলে ইনসুলিনের সঠিক কার্যকলাপ বজায় থাকে।
ছয়) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক:
বাদাম খাওয়ার পর ক্ষিদে একেবারে কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে। বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে কাঠবাদাম।
সাত) কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়:
বাদামের ফাইবার শরীরের জন্য উপাদেও। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে।
আট) কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়:
বাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় Vitamin E শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যাতে কোনো খতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর এর কোনো প্রভাব পড়ে না।
নয়) হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পানিতে ভেজানো বাদাম খেলে দেহের ভিতরে বিশেষ কিছু এনজাইমের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যার প্রভাবে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে গ্যাশ-অম্বলের প্রকোপও কমে যায়।
দশ) স্তন ক্যান্সারর ঝুকি কমায়ঃ
কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার রয়েছে যা কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও দুই হাজার পনেরো সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, বাদাম খাওয়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যাওয়ার যোগসূত্র রয়েছে।
সবাই ভাজা বাদাম খেতে পছন্দ করেন কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন ভাজা বাদামের চেয়ে কাঁচা বাদামের পুষ্টিগুণ বেশি। আবার চিকিৎসকরা বলেন, পানিতে ভিজিয়ে বাদাম খাবেন । অন্তত আট থেকে দশ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে বাদামের সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণ লাভ করে শরীর।
কাঠবাদাম খাওয়ায় সতর্কতাঃ
এক) যাদের এই বাদাম খেলে কোন সমস্যা হয় যেমনঃ অ্যালার্জি, গ্যাশ অ্যাসিডিটি, অনেক সময় টক্সিক এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তারা এই বাদাম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ রইলো।
দুই) কাঠবাদাম খেলে যেমন ওজন বাড়ে না, তেমনই কাঠবাদাম অতিরিক্ত খেলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই কাঠবাদাম অতিরিক্ত না খাওয়াই উচিত।
কাঠবাদাম খাওয়ার নিয়ম:
রাতে ৪-৬টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।
এরকম আরও ভিডিও পেতে চ্যানেলটি Subscribe করে ভিডিওতে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি বেশি শেয়ার করে আপনার বন্ধুকে জানার সুযোগ করে দিন। ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।
